একজন ইমাম ও আমার চোখে দেখা আল্লাহর কুদরত
আমার দেখা ইমাম সাহেবের কারামত
হাফেজ নাদেরুজ্জামান সাহেবের সময়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে যার বর্ণনা দিলে রীতিমত একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করা যায়।
এটা স্বাধীনতার পরের ঘটনা সম্ভবত ১৯৭৩ সালের কথা। পরানগঞ্জ বাজার মসজিদের পেছনে বিশাল জায়গা নিয়ে তালুকদার হাট। সেখানে দীর্ঘকাল যাবৎ শনিবার ও বুধবার বিকেল থেকে রাত দশটা এগারোটা পর্যন্ত হাট বসতো।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তখন যুব-রাজনৈতিকদের জয়জয়কার চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রাপালার নাম দিয়ে মেয়েদের নাচ-গান জুয়া ইত্যাদির আয়োজন করা হতো। অশ্লীল নৃত্য এবং সংস্কৃতির নামে বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র । নারী-পুরুষ সম্মিলিত এসব যাত্রা গানের প্রতি উঠতি বয়সের তরুণরা আকর্ষিত হতো । তখানকার প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় মসজিদ সংলগ্ন পুরো হাটে প্যান্ডেল পরে যাত্রাপালা আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হলো। এক মাস আগে থেকেই মাইকে প্রচার সহ পোস্টার ইত্যাদি লাগিয়ে দেয়া সহ টিকেটের হার ইত্যাদি নির্ধারণ করে ব্যাপক প্রচারণা চলছে।
মসজিদের সঙ্গে এ ধরনের একটি নাচ গান আয়োজনের তীব্র বিরোধিতা করলেন ইমাম হাফেজ নাদেরুজ্জামান। তিনি উদ্যোক্তাদের ডেকে বিনীত অনুরোধ জানালেন এ ধরনের ইসলামবিরোধী তৎপরতা না করার জন্য। নানাভাবে তিনি চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারলেন না। এমনকি তিনি মহাকুমা পর্যায়ের নেতাদের সাথে ও যোগাযোগ করলেন। তাতেও কোন ফল হলো না। তখন তার মধ্যে একটা ভিন্ন মানসিকতা দেখা গেল। তিনি মসজিদের মুসল্লিদের সামনে দৃড়ভাবে ঘোষণা দিলেন, "ইনশাআল্লাহ এই অপকর্ম মসজিদের পাশে হবে না"। সবাইকে নিয়ে তিনি বিশেষ দোয়ার আয়োজন করলেন।
অন্যদিকে আয়োজকরা ইতিমধ্যেই বিশাল জায়গা নিয়ে শহর থেকে নতুন টিন ভাড়া নিয়ে চারদিকের প্রটোকল ওয়াল সম্পন্ন করে ফেললেন। আর মাত্র দু-তিন দিন বাকি আছে। জমজমাট আয়োজন চলছে। উদ্যোক্তাদের উৎসাহের শেষ নেই। তাদের মধ্যে একটা বিজয়ী বিজয়ী ভাব । কারণ তাদেরকে ইমাম সাহেব ও মুসুল্লিরা তীব্র বিরোধিতার পরেও তাঁদেরকে থামাতে পারেনি অর্থাৎ তারা বিজয়ী হয়েছে।
কিন্তু হাফেজ সাহেব নিয়মিতভাবে প্রত্যেক নামাজের পরে দোয়ার আয়োজন করছেন এবং তিনি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস ও একিনের সঙ্গে বলছেন, এখানে এই অপকর্ম হবে না। আর মাত্র দুদিন বাকি।
আরো ইসলামি পোস্ট পড়ুন…
সন্তানের ক্যারিয়ার গঠনে আদর্শ মায়ের ভূমিকা
কন্যা সন্তানের ব্যাপারে যে ভুলটি কখোনো করবেন না!
প্রাপ্ত বয়সে বিয়ে না দেওয়ায় অভিশাপ দিলো তার মেয়ে
সময়টা ছিল ডিসেম্বর শীতের সূচনায়। ওই সময়ে সাধারণত বৃষ্টি ঝড় বাদল কোনটাই হয় না। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটে গেল। হঠাৎ দেখা গেল আকাশ মেঘলা হয়ে আস্তে আস্তে অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে আসছে, ঝড়ের পূর্বাভাস! ইতিমধ্যেই হাফেজ সাহেব ঘোষণা দিলেন আমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ইসলামবিরোধী কাজ বন্ধ রাখার জন্য চেষ্টা করেছি, আমরা পারিনি। তাই সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি এবার আল্লাহই তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেবেন। অনেকে তার এ কথা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করত, টিটকারি টিপ্পনিও কাটতো।
কিন্তু যাত্রাপালা শুরু হওয়ার মাত্র দুদিন আগে প্রচন্ড ঝড়ের সাথে অনবরত মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। একটানা ৩/৪ দিন বৃষ্টি চলতে থাকল। অনেকটা হযরত নুহ (আঃ) এর বন্যার মতো।
প্রথম দিনই ঝড়ের আঘাতে ওদের প্যান্ডেল লন্ডভন্ড হয়ে গেল। প্যান্ডেলের টিন বাতাসে উড়িয়ে অনেক দূরে নিয়ে ফেলেছে। পানিতে পুরো এলাকা ডুবে রয়েছে। বৃষ্টি যেন আর শেষ হচ্ছে না।
অবশেষে ঝড় বৃষ্টি থেমে গেল। কিন্তু বিধ্বস্ত ও ডুবন্ত প্যান্ডেলে আর যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হলো না। ঝড় বাদলের জন্য যাত্রা পার্টির লোকেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে অর্ধেক পথ এসে আবার ফিরে চলে গেছে। তাদেরকে দেয়া আগাম টাকা সহ প্যান্ডেল খরচ ইত্যাদি মিলিয়ে বিশাল অংকের লোকসান দিয়ে উদ্যোক্তারা ভীষণভাবে পর্যদুস্থ হয়ে অবশেষে হার মানতে বাধ্য হল।
সকলের মুখে মুখে তখন হাফেজ নাদেরুজ্জামানের প্রশংসা। ওনার দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব নাযিল করে ইসলাম বিরোধী কাজ প্রতিহত করা হয়েছে। এভাবেই তিনি তার অনঢ় ও অবিচল মনোভাবের কারণে সমাজের বিভিন্ন পাপাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জয়ী হয়েছেন। হাফেজ নাদেরুজ্জামান আজ নেই। কিন্তু তার মতো ইমাম বা নেতা যদি মহল্লায় মহল্লায় মসজিদে মসজিদে থাকতো, তাহলে এই সমাজের চেহারা হয়তো বা অন্যরকম হতো। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের উচু মাকাম দান করুন।
লেখকঃ মুহাম্মদ শওকাত হোসেন (সাংবাদিক ভোলা জেলা)
পিডিএফ বই ডাউনলোড করুন…
পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে মুহাম্মদ (সঃ) পিডিএফ ডাউনলোড
চলচিত্র জগতে ইসলাম - শামসুল বারুদী : cholochitro jogote islam পিডিএফ ডাউনলোড