সন্তানের ক্যারিয়ার গঠনে আদর্শ মায়ের ভূমিকা

sontaner career gothone adorsho mayer vhumika

মনীষীদের মায়েরা কেমন ছিলেন

ইমাম মালিক (রহঃ) এর মায়ের ঘটনা

ইসলাম ধর্মের প্রসিদ্ধ ৪ মাজহাবের ইমামের মধ্যে একজন হলেন ইমাম মালিক (রহঃ)। তার স্বপ্ন ছিলো তিনি একজন গায়ক হবেন। ইমাম মালিক (রহঃ) এর মা তার এই স্বপ্নকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন। তিনি ছেলের জন্য সেইসব জামা কিনে আনেন, যেসব জামা তখনকার আলেম-উলামাগণ পরতেন। ছেলেকে এইরকম জামা পরিয়ে তিনি সহজ-সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন, “বলো তো, যুহরের নামাজ কয় রাকাত?”। ইমাম মালিক (রহঃ) উৎসাহের সাথে সেইসব প্রশ্নের উত্তর দিতেন (এমন একটা ভাব, যেন তিনি ইসলামিক একজন স্কলার)। 

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এর মায়ের ঘটনা

ফিলিস্তিনের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা স্বত্বেও ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এর মা তাকে নিয়ে যান মক্কায় ইলম অর্জনের জন্য। বিশুদ্ধ আরবী শেখার জন্য মায়ের পরামর্শে বনু হুদাইল গোত্রের সাথে তিনি ১৭ বছর থাকেন। তখনকার সময়ের হাদীসের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘মুয়াত্তা’ নোট করার জন্য ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এর মা কাগজ যোগাড় করে দিতেন। 

ইমাম বুখারী (রহঃ) এর মায়ের ঘটনা

বাল্যকালে দৃষ্টিশক্তি হারানো ইমাম বুখারী (রহঃ) এর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেবার জন্য তার মা প্রতিরাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। মায়ের দোয়ার ফলে আল্লাহ ইমাম বুখারীর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। ১১ বছর বয়সে তাঁর শিক্ষক ইমাম দাখিলী (রহঃ) এর হাদীস বর্ণনার সনদ সংশোধন করে দেওয়া ইমাম বুখারী (রহঃ) দৃষ্টিশক্তিহীন অবস্থায় বেশ কিছু হাদীস মুখস্ত করেন। দৃষ্টিশক্তিহীন অবস্থায় কিভাবে মুখস্ত করলেন? ইমামের মা পাশে বসে তাকে হাদীস পড়ে শুনাতেন।

সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ এর মায়ের ঘটনা

হুমা হাতুন প্রতিদিন তার ছেলেকে নিয়ে ফজরের নামাজের পর একটা নদীর ধারে গিয়ে বলতেন, “নদীর ঐ পারের দূরবর্তী অঞ্চলটি অমুসলিমদের দখলে। ইনশাআল্লাহ! একদিন তুমি ঐ অঞ্চলটি জয় করবে।”

আরো ইসলামি পোস্ট পড়ুন
হুমা হাতুন যেই অঞ্চলটি জয়ের স্বপ্ন তাঁর ছেলেকে দেখান সেই অঞ্চল ছিলো পৃথিবীর অন্যতব দুর্ভেদ্য অঞ্চল। সেই অঞ্চল বিজয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন এবং সেই অঞ্চল বিজেতার প্রশংসা করে গেছেন- “কতোই না উত্তম সে বাহিনীর আমির!” সুলতান মুহাম্মদ আল ফাতিহ ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল জয় করে মায়ের স্বপ্ন আর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর ভবিষ্যৎবাণী পূরণ করেন। 

মায়ের ছোট্ট একটা কথাকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে ফেলার উদাহরণ খুঁজতে খুব একটা দূরে যেতে হয়না, খুব একটা বই ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়না ৷ আমাদের চারপাশেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এমন অজস্র উদাহরণ ৷

আমার রুমমে স্কুল-কলেজ শেষে ভার্সিটিতে আসে। এস.এস.সি পাশ করার পর তাঁর মা একদিন আফসোস করে তাকে বললেন, “আমার বড় শখ ছিলো আমার ছেলেটা যেন কুরআনের হাফেজ হয়!” কিন্তু ততদিনে সে কলেজে উঠে গেছে। মায়ের এই কথাটি তার অন্তরভেদ করে। প্রথমে কয়েকজন কুরআনে হাফেজের সহায়তায় এবং পরবর্তীতে নিজে নিজে মোবাইলে তেলাওয়াত শুনে সে কুরআন হিফজ করা শুরু করে। মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণে লক্ষ্যে অলরেডি সে ২৭ পারা কুরআন মুখস্ত করে ফেলছে!!!

পর্দার আড়ালের এসব স্বপ্নদ্রষ্টারা একটা জাতি গড়তে পারেন, আবার জাতি ভাঙ্গতে পারেন। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট জাতি গঠনে মায়ের ভূমিকা সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত উক্তিটি করেন – আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেবো।

মায়েরা পর্দার আড়ালে থেকে ভূমিকা রাখেন। তারা সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান। এজন্যই তো কারো ‘জীবনের লক্ষ্য কী?’ জানতে চাইলে সে এই লক্ষ্যের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ বলে, ‘মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ’। 

অনেক মা ছিলেন যারা তাদের সন্তানের স্বপ্নকে এমনভাবে গাইড করেছেন, যার ফলে সেইসব সন্তানেরা ইতিহাসের পাতায় লিজেন্ড হয়ে আছেন। মায়ের ছোট্ট একটা কথা, ছোট্ট একটা ভিশন তাদের জীবনটাই বদলে দিয়েছে।

লিখেছেনঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম

নিচে থেকে ইসলামি বই পিডিএফ ডাউনলোড করুন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url