বসতে দিলে শুতে চায় উপকারীকে বাঘে খায়

 

বহুদিন  আগে  আমার বাবা  তার  খালি  জমিতে  একটা  গরিব  পরিবারকে  থাকতে দিয়েছিলেন।  

বেশ কয়েক বছর  পর বাবা  বাড়ি  করার জন্য  জমিটা ছাড়তে  বললে  তারা ছাড়তে রাজি হলো না। পরে  অনেক কসরত করে, টাকা পয়সা দিয়ে তাদেরকে সরানো  হয়েছিল। 

শুনে  যা  বুঝলাম,  তাহলো  একটা জমিতে অনেকদিন থাকলে নাকি তাতে তার অধিকার জন্মে যায়। 

আমিতো  অবাক।  দয়া করে  থাকতে  দিয়েছে। কোথায়  কৃতজ্ঞ হবে, তানা  উল্টো  দখল  করে বসে  আছে।   ভাবলাম  জমির  ব্যাপারতো তাই হয়তো লোভ  সামলাতে  পারেনি।

আমি যেখানে থাকি  সেখানে এক রিক্সাওয়ালা আছে  আমার দেশি।  বাজারে  সে  থাকলে আমি  তার  রিক্সাতেই  আসি। বাজার থেকে আমার  বাসা  পর্যন্ত  ভাড়া  ৪০ টাকা ফিক্সড। তবে  আমি  নিয়মিত ৫০  টাকা দিতাম। 

একদিন  আমার  কাছে  খুচরা ৪৫ টাকা ছিলো। ঐ  টাকাই  দিলাম। টাকাটা  দেয়ার  সাথে সাথে একরকম চিৎকার করে উঠলো, “ আর ৫ টাকা ?  " আমি  কিছুক্ষন  চুপ থেকে বললাম, " ভাড়াতো  ৪০ টাকা, বাকি  ৫ টাকা ফেরত  দেন। "লোকটা হেসে বলল না  সবসময়তো ৫০ টাকা দেন  তাই  কইলাম।  ভাবলাম থাক গরিব মানুষতো, তাই এমন করলো।

আমার  এক  প্রতিবেশী। 

রোজ বাচ্চাকে স্কুলে দিতে যায়। তার  গোয়ালাটা  সে ফেরার  আগে দুধ নিয়ে আসে।  আমি  বাড়িতে  না  থাকায় সেই  দুধ নেয়ার  দায়িত্বটা  আমার কাজের লোকের  উপর পড়ে।  

প্রতিবেশি  হিসেবে এটুকু  উপকারতো  করতেই  হয়। একদিন  আমার কাজের লোকটি  কোথাও একটা কাজে  বেড়াতে গেছে, দুধটা  আর  নেয়া হয়নি। 

আমি বাসায়  ফেরার  পর  উনি এসে বলল,

" আপনার  কাজের  লোক  কোথায়? "

-- একটু বেড়াতে গেছে। 

--আমাকে  আগে  বলল  না। এখন  দেখেনতো আমার ছোট  ছেলেটা  কি  খাবে ? 

আগে  বললে  আমি  অন্য কাউকে  দায়িত্ব দিতাম।

--ভাবি  ও হয়তো  ভুলে গেছে।

--না  যাই বলেন  কোনো দায়িত্ব নিলে ঠিক ভাবে  পালন  করতে  হয়।

--ভাবি ও হয়তো  আপনার  এই দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত  পারিশ্রমিক  পায়না  তাই অবহেলা করেছে। আপনি  বরং  দায়িত্বটা  অন্য কাউকে দিয়েন।

সে  কিছুক্ষন  আমার  দিকে  তাকিয়ে থেকে গটগট করে চলে গেলো। 

ভাবলাম,  অল্প শিক্ষিত মহিলাতো  তাই  এমন আরকি।

আমার  এক  কলিগ। গর্ভবতী হয়ে অফিসে কাজ করেন,  আমি  তার কষ্ট দেখে  তার একটা কাজের দায়িত্ব নিজে থেকেই নিলাম।

সে  মাতৃত্বকালীন  ছুটিতে  গেলো। সে  ফিরেও এলো।  তাকে কাজটা  ফিরিয়ে  দিতে  চাইলে  সে  গরিমসি  শুরু করলো।  ভাবটা  এমন  যে কাজটা  আমারই ছিলো।   এবার  ভাবনাটা  বদলালাম।

আসলে  মানুষ একটা  সুবিধা বেশিদিন ভোগ করলে  সেটাকে  তার  অধিকার  ভেবে নেয়। 

ভুলে যায় --"It's  facility,  not right." 

তাই  শুধু  সুবিধা  দেয়া নয়,  নেয়ার ক্ষেত্রেও সাবধান  থাকা  দরকার। হিউম্যান  বিহেভিয়ার  খুব অদ্ভুত। এটা প্রায় সবার ক্ষেত্রেই কাজ করে।

টিউশনি  করানোর  সময়  আন্টি  প্রতিদিন নাস্তা দিতেন।  হঠাৎ  টানা ২-৩ দিন  নাস্তা না দেয়ায়  আমার  খুব  খারাপ  লেগেছিল, আরে নাস্তাই  দিল না। 

পরে  অবশ্য  আমার  নিজের  আচরণে আমি নিজেই  অবাক হই।  আমার  সাথে  তো কখনো অভিভাবক  এর  নাস্তা  নিয়ে  চুক্তি  হয়নি, 

তারা  তো  আমাকে  নাস্তা  দিতে  বাধ্য নন। 

বরং  নাস্তা  দেয়ার জন্য  আমার  তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা  প্রকাশ  করা উচিৎ ছিল। 

কোনটা  অধিকার  আর  কোনটা  অতিরিক্ত পাচ্ছি, সেটা  বোঝা  জরুরি।

লিখেছেনঃ জহির রায়হান

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url